Thursday, June 4, 2020

নৃশংসভাবে পশু হত্যা করাটাকে একেবারে অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছে কেরালার এক শ্রেণীর মানুষ

ভারত

পশু বসুন্ধরা, ০৪/০৬/২০২০ : কেরালার মানাপ্পুরমে নৃশংসভাবে অন্তঃসত্ত্বা হস্তিনীর হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করা হবে এবং দোষীদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে বলে আজ জানালেন দেশের পরিবেশ মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর।  সরব হয়েছেন স্মৃতি ইরানীও, বলেছেন, "পশুদের বোমা খাওয়ানো আমাদের দেশের সংস্কৃতি নয়"। ঘটনার পর থেকেই প্রতিবাদে সোচ্চার ছিলেন মানেকা গান্ধী। 
কেরালার সাইলেন্ট ভ্যালি থেকে একটি হস্তিনী খাবারের খোঁজে মনপ্পুরম জেলার আট্টাপাড্ডি  গ্রামে চলে এসেছিল। কয়েকজন গ্রামবাসী সেই হস্তিনীকে একটি আনারস খেতে দিয়েছিল। সরল বিশ্বাসে হস্তিনী সেই আনারসটি মুখে পুড়েছিল। কিন্তু গ্রামবাসীরা সেই আনারসের মধ্যে ভরে দিয়েছিল বোমা। সেই বোমা  হস্তিনীর মুখেই ফেটে যায়।রক্তাক্ত হস্তিনী কারোর কোনো ক্ষতি না করে পাশেই বয়ে চলা ভেল্লিয়ার নাদির মাঝ বরাবর গিয়ে তার পেট ও মাথা ডুবিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল, সে বুঝতে পেরেছিল, তার মৃত্য আসন্ন। হস্তিনীর পেটে ছিল ছয় মাসের বাচ্ছা। যাতে বাচ্ছার কোনো ক্ষতি না হয় তাই সে পেট ডুবিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল অনেক্ষন। বন্ দপ্তরের কর্মীরা চেষ্টা করেও তাকে সেখান থেকে নড়াতে পারে নি। ওখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই  তার মৃত্যু হয়।
ওই হস্তিনীর দেহ যে ডাক্তার ময়না তদন্ত করেন, গতকাল  সেই পশুচিকিৎসক মোহন কিষান ঘটনার বয়ান দিতে গিয়ে কার্যত কান্নায় ভেঙে পড়েন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কেঁপে ওঠে গোটা দেশ। সোশ্যাল মিডিয়ায় রীতিমত ঝড় বয়ে যায় গতকাল। সবাই বলতে থাকেন, "মানুষ কিভাবে এতটা নৃশংস হতে পারে। নিজেদেরকে মানুষ হিসেবে ভাবতেই লজ্জা করছে।" সত্যিই লজ্জায় মাথা হেঁটে হয়ে যায়। গোটা বিশ্ব এখন এই ঘটনার জন্যে ধিক্কার জানাচ্ছে।
কিন্তু কেরালার এই মনপ্পুরম জায়গাটির এক শ্রেণীর মানুষের মধ্যে লজ্জা শরম বিষয়টাই নেই। এরা  এরকমই। কিছুদিন আগে ঠিক এভাবেই একটি হাতিকে  মেরেছিল এখানকার গ্রামবাসীরা বলে জানতে পারা যাচ্ছে। সেই হাতিটিকে অরণ্যের মধ্যে উদ্ভ্রান্তের মত ছুটে বেড়াতে দেখা গিয়েছিল। সেই হাতিটিরও চোয়াল ভেঙে গিয়েছিল, ঠিক যেমন এই হস্তিনীর চোয়ালও ভেঙে গিয়েছিল। সেই হাতিটির শুঁড় ক্ষতবিক্ষত হয়ে গিয়েছিল। বন্ দপ্তরের কর্মীরা অনেক চেষ্টার পরে  বেহুঁশ করে চিকিৎসা শুরু করলেও তাকে আর বাঁচানো যায় নি;
মনপ্পুরমের একশ্রেণীর মানুষ এরকমই। ২০১৬ সালে বিষ খাইয়ে এখানকার মানুষ প্রায় ৪০০টি পথ কুকুরকে হত্যা করেছিল। কোনো শাস্তি তাদের হয় নি। এরা পথে ঘাটে বিষ ছড়িয়ে রাখে পশু পাখিকে মারার জন্যে। অথচ কোনো অজ্ঞাত কারণে এদের কোনো শাস্তি হয় না। এবারেও হয় নি। অন্তত এখনো পর্যন্ত হয় নি। কেরালার বন মন্ত্রী কে রাজু জানিয়েছেন, "একটি হাতি সারা দিনে কয়েক কিলোমিটার ঘুড়ে বেড়ায়, ঠিক কোন জায়গায় কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, তা খুঁজে বের করা খুব মুশকিল।" এই হল কেরালা সরকারের মনোভাব। নৃশংসভাবে পশু হত্যা করাটাকে একেবারে অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছে কেরালার এক শ্রেণীর মানুষ।
গতকাল ভগবানের আপন দেশ কেরালায় যে বর্বরোচিত হাতি হত্যার ঘটনা ঘটেছে, তাতে দেশের আপামর সাধারণ মানুষ গর্জে উঠে বলেছে 'অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।, অনেকেই দোষীদের মৃত্যুদণ্ড চেয়েছেন। এই ঘটনায় মুখ খুলেছেন অনেকেই,  অনুষ্কা শর্মা, অক্ষয় কুমার, বরুন ধাওয়ান, জন আব্রাহাম, আলিয়া ভাট, দিশা পাটানি এবং দিয়া মির্জারা দোষীদের কঠোর শাস্তি চেয়েছেন। ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক বিরাট কোহলিও। অর্জুন কাপুর বলেছেন, "আমরা হেরে গিয়েছি। এই গ্রহটাকে রক্ষা করতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। এই গ্রহেই অন্যান্য যে সব প্রজাতি আমাদের সাথেই বসবাস করে আমরা তাদেরকে ন্যূনতম শ্রদ্ধাটুকুও করতে পারি নি. কেরালার ঘটনায় আমাকে স্তম্ভিত করেছে।"
আসলে আমাদের দেশে বন্য প্রাণীকে বা অন্যান্য পশুকে হত্যা বা নির্যাতনের জন্যে কোনো কঠোর আইন নেই। আমাদের দেশে তাই পশুরা খুব বেশি সুরক্ষিত নয় বলেই মনে করেন দেশের পশুপ্রেমীরা। যাঁরা আইন প্রণয়ন করেন, তাঁদেরকেও এই ঘটনা বিচলিত করেছে, কিন্তু পশু নির্যাতনের জন্যে একটি কঠোর আইন কি তাঁরা নিয়ে আসবেন ? এটাই এখন বড় প্রশ্ন দেশের পশুপ্রেমীদের। 

No comments:

Post a Comment