Tuesday, November 5, 2019

Bengali Steve Erwin is passed away.

চলে গেছেন বাঙালি স্টিভ আরউইন অনুপ ঘোষ


পশু বসুন্ধরা, ০৫/১১/২০১৯ :  চলে গেছেন আমাদের স্টিভ আরউইন অনুপ ঘোষ, পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের ২৪ পরগনা জেলা কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি। প্রকৃতি প্রেমিক ও পশুপ্রেমিক মৃদুভাষী অনুপ ঘোষ ছিলেন একজন অভিজ্ঞ সর্পবিশারদ। সাপ চিনতেন, সাপ ধরতেন, জঙ্গলে ছেড়ে দিয়ে আসতেন, সাপ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে গড়ে তুলতেন সচেতনতা। সাপ সম্পর্কে তাঁর ছিল অগাধ পাণ্ডিত্য, সেই সর্প বিশারদকেই চলে যেতে হল সাপের কামড় খেয়ে। সাপ ধরার ব্যাপারে তাঁর কোনো সরকারি ট্রেনিং ছিল না ঠিকই, কিন্তু ছোটবেলা থেকে বেদে  বা সাপুড়েদের সাথে মাঠে ,মাঠে ঘুরে সাপ  চেনার আর ধরার কায়দা রপ্ত করেছিলেন অনুপ বাবু। বন দপ্তর প্রায়ই তাঁকে ডেকে পাঠাত সাপ  ধরার জন্যে, এতে করে তাঁর কোনো উপার্জন না হলেও তিনি ভালোবেসেই এই কাজ করে গিয়েছেন সারা জীবন।

গত বৃহস্পতিবারও ডাক এসেছিল বন দপ্তরের  তরফ থেকে, সেইমত সাপ ধরতে নৈহাটির হাজীনগর অঞ্চলে চলে যান অনুপবাবু। সেখানকার একটি বাড়ি থেকে তিনটি বিষাক্ত সাপ  উদ্ধার করেন তিনি, প্রথম দুটি সাপকে ঝোলায় পুরে নিলেও তৃতীয় ৫ ফুট লম্বা চন্দ্রবোড়া সাপটিকে ঝোলায় ভরতে গেলে সেটি কামড় দেয় অনুপ বাবুর হাতে। সাপটি কামড়ে ধরেছিল তাঁর হাত; সঙ্গে থাকা বন দপ্তরের আধিকারিকরা দ্রুত তাঁকে নিয়ে  গিয়েছিলেন প্রথমে নৈহাটী হাসপাতালে, তারপর সেখান থেকে জহরলাল নেহেরু মেমোরিয়াল হাসপাতালে। খবর পেয়েই ছুটে যান সমর  চ্যাটার্জি, সুকুমার ঘোষ, ড. অশোক সরকার, সফল সেন, অনিন্দিতা ভৌমিক সহ  বিজ্ঞান মঞ্চের অন্যান্য কর্মীরা।  অনুপবাবুকে পর পর ৩০ ডোজ এন্টিভেনাম দেওয়া হলেও শেষমেষ বাঁচানো যায়নি তাঁকে। প্রথম দিকে চিকিৎসায় সাড়া  দিচ্ছিলেন তিনি, হাসপাতালের বেড়ে শুয়েই তিনি জানিয়ে দেন সাপ  ধরার কাজ চালিয়ে যাবে তিনি। কিন্তু তার পরেই অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে; ব্লাড প্রেসার কমতে থাকে, শ্বাস কষ্ট শুরু হয়, প্রস্রাবের সাথে রক্ত চলে আসে. ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয় তাঁকে। তার পর সব শেষ; চলে গেলেন ৬৩ বছর বয়সী অনুপ বাবু।

অনুপবাবুর মৃত্যুর সাথে সাথে বেশ কিছু প্রশ্ন উঠে এসেছে। প্রথমত, ৩০ ডোজ এন্টিভেনাম দিয়েও কেন অনুপবাবুকে বাঁচানো গেল না ?  কেউ কেউ বলছেন ৪০ ডোজ দিয়েও বাঁচানো যেত  না, কারন আমাদের এরাজ্যে এই এন্টিভেনাম তৈরি হয় না, এই প্রতিষেধক আনতে  হয় দক্ষিণ ভারতের মহাবলীপুরম থেকে। কলকাতায় আগে বেঙ্গল কেমিক্যাল এই প্রতিষেধক তৈরি করত এখানকার সাপের বিষ সংগ্রহ করে  , কিন্তু ২০০৯ সাল  থেকে সেই কারখানা বন্ধ হয়ে রয়েছে। ২০১৬ সাল  থেকে দক্ষিণ ভারতের তৈরি প্রতিষেধকই ভরসা। দক্ষিণ ভারতের সেই কারখানা সেখানকার স্থানীয় সাপেদের বিষ  থেকেই সেই প্রতিষেধক বানায়, আমাদের রাজ্যে চন্দ্রবোড়া সাপের বিষ  আরও মারাত্মক, তাই মনে করা হচ্ছে যে দক্ষিণ ভারতীয় প্রতিষেধক সেভাবে কাজ করেনি। 
আমাদের দেশে সাপ নিয়ে খেলা দেখানো নিষিদ্ধ হওয়ায় বেদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে, সাধারণ মানুষের মধ্যেও সচেতনতা কম, তাই যেখানে সেখানে সাপ  ধরা পরলেই যাতে মানুষ মেরে না ফেলে তাই জন্যেই অনুপ বাবুদের মত কিছু মানুষ বিনা পারিশ্রমিকে এতদিন কাজ করে যাচ্ছিলেন। কিছুদিন আগে এই ব্যাপারে  রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তরের সাথে কথা বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। এবার বিজ্ঞান মঞ্চ এই বিষয়টিকে নিয়ে সরব হতে চলেছে। সাপ  নিয়ে কাজ করা এই মানুষদের প্রাণের কোনো মূল্য কি নেই ! আজ যদি অনুপবাবুর জীবন বীমা করা থাকত তাহলে তাঁর পরিবারকে চরম বিপদের সামনে এসে পড়তে হত না;  যাঁরা এই ভাবে প্রতিদিন নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে চলেছেন, তাঁদের কিছু অর্থ সাহায্য করা কি উচিত নয় সরকারের ? সরকারেরই উচিত রাজ্যেই যাতে গুণমান বিচার করে সাপের প্রতিষেধক তৈরি করা যায় তার ব্যবস্থা  করা; গত মাসেই বৃষ্টি বিলম্বিত হওয়ার কারনে সাপের দেখা মিলেছিল বিভিন্ন জায়গায় আর সাপের বিষে গত মাসেই  গিয়ে মারা গিয়েছেন ৫০ জন মানুষ। রাজ্যে সাপ নিয়ে যাঁরা কাজ করেন তাঁদের  পাশে সরকারের দাঁড়ানো উচিত বলে মনে করছেন স্বেচ্ছাসেবী মানুষরা, তাঁরা কাজ না করলে এরপর সাধারণ মানুষ তো সাপ  দেখলেই মেরে ফেলতে চাইবে, আর তাতে সাপের অস্তিত্ব সংকটে পরে যাবে, যা বাস্তুতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর হয়ে উঠবে। রাজ্য সরকার বিষয়টিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই নবান্ন রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করার নির্দেশ দিয়েছে। অনুপবাবু যে শুধু সাপেদের জন্যেই কাজ করে গেলেন তাই নয়, তাঁর মৃত্যু রাজ্য সরকারকে মনে করিয়ে দিল তাঁর সহকর্মীদের সুরক্ষার বিষয়টি এবার ভাবা উচিত।

Feeding to street dogs at Maldah

পথ সারমেয়রা পেট ভরে মাছ, মাংস, ভাত  খেল মালদহে 


পশু বসুন্ধরা, মালদহ, ০৫/১১/২০১৯ :  মালদহ কেনেল ক্লাব ও মালদহ কালেক্টরেট রিক্রিয়েশন ক্লাবের উদ্যোগে মালদহ শহরের মোট ১৬টি জায়গায় পথ সারমেয়দের পেট ভরে খাওয়ানো হল, মেনুতে ছিল সুস্বাদু  মাছ, মাংস, ভাত; রীতিমত শালপাতার থালায়  পাত পেরে যত্ন করে খাওয়ানো হয়েছে সারমেয়দের। শুধু তাই নয় এই সারমেয়দের ডি- ওয়ার্মিংয়ের ব্যবস্থাও করা হয়েছিল। এই অনুষ্ঠানটি ছিল গত রবিবার। দুই সংস্থার পশুপ্রেমী সদস্যরা গাড়ি নিয়ে ঘুরে ঘুরে শহরের বিভিন্ন রাস্তায় আন্তরিক সহৃদয়তায় সারমেয়দের খাবার খাওয়ান। 

অনুষ্ঠানের সূচনা হয়েছিল মালদহ প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে। এরপর দলে দলে ভাগ হয়ে গিয়ে গোটা শহরের সারমেয়দের খাওয়ানো হয়; মোট ৫৩০টি সারমেয় রবিবার খেয়েছে মহাভোজ। তাঁদের এই উদ্যোগ দেখে সাধারণ মানুষ নিশ্চয়ই এগিয়ে আসবেন এবং পথ সারমেয়দের সামান্য হলেও  খাবার দেবেন, এমনটাই আশা করছেন মালদহের পশুপ্রেমী উদ্যোক্তারা।

Salute my friend

আসুন আজ স্মরণ করি আমাদের ৬৫ বছর বয়সী পুরোন এক বন্ধুকে 


পশু বসুন্ধরা - ০৫/১১/২০১৯ : আজ থেকে ৬২ বছর আগে, তারিখটা হল ৩রা নভেম্বর ১৯৭৫, চারদিকে  কিসের যেন তোড়জোড় চলছে, দু পেয়ে মানুষগুলো যেন আজ কেমন একটু বেশি ছোটাছুটি করছে, আমাকে দুদিন ধরে এদের মাঝে এনে রাখা হয়েছে, কেন কে জানে ! তবে হ্যাঁ, এই দুদিন আমি যা খেতে পেয়েছি, তা আমি এর আগে কক্ষনো পাইনি, পেট ভরে খেয়েছি, ঘুমিয়েছি, মাঝে মাঝে শুধু ঐ দু পেয়েগুলো দল বেঁধে  আমাকে দেখতে এসেছে ,তারা  নিজেদের মধ্যে কি যেন সব কথা বলত! আজ সকালে খাওয়া হয়ে গেছে,পটি হয়ে গেছে, এক ঘুম দেওয়া হয়ে গেছে; হঠাৎ দেখি বাহারি বেল্ট দিয়ে আমাকেওরা  বাঁধছে, কিছুটা আদর করল আমার মাথায় হাত দিয়ে, আমার তো বেশ ভালই লাগছিল, কিন্তু তারপর থেকে একটা অন্যরকম বাড়ির মধ্যে কোথায় যেন সবাই মিলে  আমাকে রেখে দিয়ে গেল; জায়গাটা একটু ঠান্ডা ঠান্ডা, চুপচাপ শুয়ে রইলাম, চারদিকও  একদম চুপচাপ। পেট ভরা থাকায় আবার একটু ঘুম ঘুম আসছিল, তারপর হঠাৎ একটা ঝাঁকুনি, কি হল ! আমি তো ভয়ই  পেয়ে গেছি, কিছুই বুঝতে না পেরে উঠে দাঁড়াতে গেলাম, কিন্তু কিছুতেই পারলাম না; ওরা  কি আমাকে বেঁধে রেখে গেছে ?  ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে আসছিল। কিছুই বুঝতে পারছিলাম না; কি করব এবার ! জল খেতে ইচ্ছে করছিল খুব, কিন্তু এখানে তো কোথাও জল দেখতে পাচ্ছি না ! তাহলে কি হবে ! ভয়ে কুঁকড়ে যেতে থাকলাম, বুকের ভেতরে কেমন যেন একটা শ্বাস বন্ধ  করা অবস্থা। খুব, খুব কষ্ট হচ্ছিল , মাথা ঘুরিয়ে কাউকে দেখতে না পেয়ে চিৎকার করলাম, কিন্তু একি ! আমার গলা দিয়ে কোনো স্বর  বেরোলো না কেনা ? এ আমি কোথায় এলাম ? আমার শরীরে একটুও শক্তি নেই, আর তো নড়াচড়াও করতে পারছি না, ও:, আর পারছি না; মনে হচ্ছে শরীরের ভেতর থেকে দলা পাকিয়ে কি যেন বেরিয়ে আসতে  চাইছে, আমার চোখ বন্ধ  হয়ে গিয়েছিল, প্রানপন চেষ্টা করে একবার চোখ খোলার চেষ্টা করলাম, কিন্তু কিছুই  আর দেখতে পেলাম না, তার মধ্যেই বুঝতে পারলাম  আমার পটি  হয়ে গেছে, তারপর ... আর ....আর 

মনে পরে লাইকাকে ? লাইকা, রাশিয়ার সেই মংগ্রেল মেয়ে সারমেয়, বিশ্বের মহাকাশ গবেষণার ইতিহাসে প্রথম পশু মহাকাশচারী  হিসেবে যার নাম লেখা থাকবে উজ্জ্বল অক্ষরে। স্পুটনিকে করে লাইকাকে পাঠানো হয়েছিল মহাকাশে, সেখানেই যে তার মৃত্যু  হবে সেটা সবাই জানতো। রকেট উৎক্ষেপণের পর পৃথিবীর কক্ষপথের মধ্যেই মাত্র ৭ ঘণ্টার মধ্যে মৃত্যু হয়েছিল ৩ বছর বয়সী লাইকার। আসুন আজ ৬২ বছর পর তাকে আর একবার স্মরণ করি;

Monday, November 4, 2019

INTRODUCTION

পশু বসুন্ধরা 


পশু বসুন্ধরা, ০৪/১১/২০১৯ : ওদেরও যে একটা জগৎ আছে, ওরাও যে এই সুন্দর বসুন্ধরার একটি প্রাণী, মানুষের মতই, ওদেরও যে মন আছে সেটাই কেউ বুঝতে চায় না আজকের পৃথিবীতে। আজ থেকে পথ চলা শুরু করল 'পশু বসুন্ধরা', প্রতিজ্ঞা করছি, একটা নতুন পৃথিবী গড়ে তোলার যে পৃথিবী ওদের ভালবাসবে, এই গ্রহেরই একজন বলে মানবে, ওদের বাঁচার অধিকার আছে; সেই অধিকার কেউ ছিনিয়ে নিতে পারবে না; আমরা বুক দিয়ে আগলে রাখব আমাদের বন্ধুদের। পাশে থেকো। - পশু বসুন্ধরা